
অর্থনীতির ৩০ দিন সংবাদ :
বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) দীর্ঘদিন থেকেই বিতর্কিত প্রতিষ্ঠান হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে আসলেও বর্তমানে এর থেকে কতটুকু বেরিয়ে আসেত পেরেছে তা বুঝা মুশকিল। অনেকে আবার মালিকানায় প্রভাবশালীদের কথা উল্লেখ দিয়ে বলেন, আইডিআরএ হল ”শক্তের ভক্ত, নরমের জম” ২০২৪ এর পরিবর্তনের পরেও প্রতিষ্ঠানটি তা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বলে মনে হয় নাই।
বীমা খাতে আর্থিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় পরিচালনার অভিযোগে ইসলামী ইনস্যুরেন্স বাংলাদেশ লিমিটেড-কে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেছে বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। আইডিআরএ-এর পরিচালন ও পরিদর্শন শাখা থেকে জারি করা আদেশে এ তথ্য জানানো হয়। তবে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়মিত ব্যয়ের পরিমাণ বিবেচনায় জরিমানার অঙ্ক অত্যন্ত অপ্রতুল বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।
নোটিশে বলা হয়, বীমা আইন, ২০১০–এর ধারা ৩৫ ও ৪০ অনুযায়ী কোনো বীমা কোম্পানি নির্ধারিত আর্থিক কাঠামো ও নীতিমালা ভঙ্গ করে আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত ব্যয় করতে পারে না। কিন্তু ইসলামী ইনস্যুরেন্স এ বিধান অমান্য করে নিয়মের বাইরে গিয়ে ব্যয় পরিচালনা করেছে। আর্থিক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি স্বীকৃত সীমা অতিক্রম করে ব্যয় করেছে, যা গ্রাহকের স্বার্থের পরিপন্থী এবং বীমা খাতের সুশাসন ক্ষুণ্নকারী।

তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানিটি ২০২৩ সালে প্রায় ৬০ কোটির বেশি ব্যবসা করেছে। আইডিআরএ-এর নীতিমালা অনুযায়ী বিভিন্ন খাতে কোম্পানিটির সর্বোচ্চ ব্যয় করার অনুমতি ছিল ৪০ শতাংশ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি ব্যয় করেছে প্রায় ৭৫ শতাংশ, অর্থাৎ নিয়মের অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ। হিসাব অনুযায়ী, ৬০ কোটির ৩৫ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয়ের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২১ কোটি টাকা—যা অনিয়মিত ও বিধিবহির্ভূত ব্যয় হিসেবে বিবেচিত।
খাতসংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, বিভিন্ন ‘যোগ-ছায়া যোগে’ এসব অর্থ ব্যয় দেখিয়ে বাস্তবে অপচয় বা লোপাটের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে মাত্র ৫ লাখ টাকার জরিমানাকে ‘অতি নগণ্য’ এবং ‘অকার্যকর শাস্তি’ হিসেবে দেখা হচ্ছে। অনেকে মনে করছেন, ২১ কোটি টাকার অনিয়মের বিপরীতে ৫ লাখ টাকার জরিমানা কার্যত অপরাধীদের আরও প্রণোদনা দেবে, কারণ এ জরিমানার অঙ্ক মোট অনিয়মের মাত্র শূন্য দশমিক দুই পাঁচ শতাংশের মতো।
বিশ্লেষকদের মতে, যখন কোনো প্রতিষ্ঠানের অনিয়মের অঙ্ক কোটি টাকায় হয়, তখন শাস্তির পরিমাণ সামঞ্জস্যপূর্ণ না হলে তা পুরো বীমা শিল্পের সুশাসন ও গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করে। তাদের মতে, শাস্তিমূলক ব্যবস্থা কার্যকর করতে হলে অনিয়মিত ব্যয়ের অঙ্কের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা উচিত। অনেকে উল্লেখ করেন, যদি ২১ কোটি টাকার অনিয়মিত ব্যয়ের বিপরীতে কমপক্ষে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৪২ কোটি টাকা জরিমানা ধার্য করা হতো, তবে ভবিষ্যতে কেউ এমন অনিয়মে জড়ানোর সাহস পেত না।
আইডিআরএ-এর নোটিশে কোম্পানিকে ১৫ দিনের মধ্যে নির্ধারিত ব্যাংক হিসাবে জরিমানার টাকা জমা দিয়ে প্রমাণপত্র দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নোটিশটি স্বাক্ষর করেন আইডিআরএ-এর উপপরিচালক (আইন) মোঃ আব্দুর রহিম। পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানটিকে ভবিষ্যতে আর্থিক শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সতর্ক করা হয়েছে।
তবে বীমা খাতের স্বচ্ছতা ও শৃঙ্খলা রক্ষায় এই শাস্তি যথেষ্ট কি না—এ নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। অনেকের মতে, বীমা শিল্পে আস্থা ফিরিয়ে আনতে শক্তিশালী ও কঠোর নিয়ন্ত্রণই এখন জরুরি।




















